জাতীয় পরিচয়পত্রের এত গুরুত্ব এর আগে নাগরিকদের কাছে ছিল না। অনেকেরই ধারণা ছিল শুধু ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেই এই পরিচয়পত্র কাজে লাগবে। কিন্তু এখন জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে এই পরিচয়পত্রটি হয়ে উঠেছে নাগরিকের পরিচয় সনদ। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহে আগ্রহী। এই পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা ঝামেলায়ও পড়তে হয়। তার একটি হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল। ফলে এখন কিন্তু পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য এনআইডি উইংয়ে চাপ বাড়ছে। এনআইডি উইং বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তা থেকেই কাজটি নিয়ে গেছে থানা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে। কিন্তু রাজশাহীতে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা একেবারেই অনভিপ্রেত।
গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাজশাহীতে নতুন ভোটার হতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে ১২৫ জন তরুণ-তরুণী। এই তরুণ-তরুণীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘অপ্রকৃতিস্থ’ বা পাগল উল্লেখ করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। এতে তারা ভোটার হতে পারবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এমনটা হয়েছে। অন্যদিকে জেলা নির্বাচন অফিসের দাবি, নতুন ভোটার হতে নির্বাচন কমিশন থেকে অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা রয়েছে। আবেদনের ‘অন্যান্য তথ্য’ অংশে ‘অসমর্থতা’ শিরোনামে একটি ছক রয়েছে। এই ছকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও অপ্রকৃতিস্থতা বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। ছকটিতে অনেকে না বুঝে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ নির্বাচন করেছে। ফলে ডাটাবেইসে তাদের তথ্যে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ এসেছে।
নিঃসন্দেহে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী ও নির্বাচন কমিশন অফিসের জন্য বিব্রতকর। কারণ নিয়ম অনুযায়ী আদালত স্বীকৃত কোনো অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ভোটার হতে পারবে না। তালিকা থেকে বাদ যাবে। আবার জাতীয় পরিচয়পত্র পেলেও কোনো সুবিধা বা সেবা গ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ দেখালে সে সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে এখন কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই পরিচয়পত্রে কোনো ভুল থাকলে তা দ্রুত সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিষয়টির সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় পরিচয়পত্রে সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অপ্রকৃতিস্থতা আসা নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী নির্বাচন কমিশন অফিস। তারা সংশোধনের জন্য ঢাকায় পাঠাচ্ছে। দ্রুত বিষয়টি সমাধান হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।