ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে গত শনিবার দ্বিতীয় মেয়াদের তিন বছর পূর্ণ করেছেন মো. আতিকুল ইসলাম। মেয়র নির্বাচনের আগে নগরবাসীকে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিন বছর শেষে সেই সব প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা সফল কিংবা ব্যর্থ হয়েছেন, সেসব নিয়ে বলেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন তৌফিক আহমেদ তফছির
ঢাকাকে সবুজ করতে পারিনি, এটা কষ্টের : মেয়র আতিক
ওয়াশিংটননিউজ টিভি : মশার উপদ্রবে নগরবাসী অতিষ্ঠ। বছরজুড়েই এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। গত তিন বছরে মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় উত্তর সিটি করপোরেশন কতটা সফল হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আতিকুল ইসলাম : মশা নিধনে আমাদের প্রচলিত যে পদ্ধতি রয়েছে সেটি ভুল। এই ভুল পদ্ধতি সংশোধনের চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের কোনো ল্যাব ছিল না। এর ফলে মশার ধরন বুঝে ওষুধের ব্যবস্থা করা যেত না। এখন আমরা নিজস্ব ল্যাব করছি। এতে মশার ধরন বুঝে ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তখন ওষুধের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। আশা করছি, নগরবাসী এতে উপকৃত হবেন।
ওয়াশিংটননিউজ টিভি : নগরীর আরেক সমস্যা জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও এখনো সামান্য বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় পানি জমে। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে কত সময় লাগবে?
আতিকুল ইসলাম : নগরীর জলাবদ্ধতা কমাতে আমরা জিপিএসের মাধ্যমে হটস্পট চিহ্নিত করেছি। কোথায় কোথায় পানি জমছে, কেন জমছে, এগুলো চিহ্নিত করার পর ১০৪টি হটস্পট পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলো নিরসনে আমরা কাজ করেছি। বর্তমানে রয়েছে আরো ১২-১৩টি হটস্পট। এগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি। আগে সামান্য বৃষ্টি হলে নৌবাহিনীর সদর দপ্তরের সামনে, খেজুরবাগান, মধুবাগ, আসাদগেট, শেওড়াপাড়া—এসব স্থানে পানি জমত। পদক্ষেপ নেওয়ার পর এখন আর সেখানে পানি জমে না।
ওয়াশিংটননিউজ টিভি : ঢাকা উত্তর সিটিতে যে ১৩টি খাল রয়েছে, তার বেশির ভাগই সংকীর্ণ, আবার কোনোটির চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব খাল উদ্ধারে দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকে জোর দিয়েছেন, কতটা সফল হয়েছেন বলে মনে করেন?
আতিকুল ইসলাম : খাল উদ্ধারে অনেক জটিলতা আছে। উদ্ধারের পর দেখা গেল আবার দখল হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে আমরা খাল উদ্ধার শেষেই খননকাজ শুরু করে দিয়েছি। এভাবে ইব্রাহিমপুর, লাউতলা, কল্যাণপুর, রূপনগর, আবদুল্লাহপুর, সিভিল এভিয়েশন, বাইশটেকি এবং বাউনিয়া খাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, খাল পরিষ্কার করার পর আবারও সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এর জন্য আমরা এখন সীমানা নির্ধারণ করে পিলার বসানোর কাজ করছি।
ওয়াশিংটননিউজ টিভি : খাল উদ্ধারে মূল চ্যালেঞ্জ কোনটি বলে আপনি মনে করেন?
আতিকুল ইসলাম : মূল চ্যালেঞ্জ সীমানা নির্ধারণ। সিএস জরিপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে পিলার বসাতে গেলেই বাধা আসছে। মহানগর জরিপ নিয়ে এসে অনেকে নিজেদের জায়গা বলে দাবি করেছেন। এর মধ্যেও পাঁচ শতাধিক পিলার বসানো হয়েছে। কারণ খাল উদ্ধার করা না গেলে এই শহরের জলাবদ্ধতার শেষ হবে না। একই সঙ্গে রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ বাস্তবায়ন করাও অসম্ভব হবে।
ওয়াশিংটননিউজ টিভি: যানজট নিরসনে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
আতিকুল ইসলাম : যানজট নিরসনে বড় কাজ করে দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। মেট্রো রেলের মতো বড় কাজের সঙ্গে এখন দরকার সংযোগ সড়ক। এর জন্য ‘ইন্টিগ্রেটেড করিডর ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটননিউজ টিভি: তিন বছর শেষে আপনার কোন কাজ আপনাকে স্বস্তি দিচ্ছে?
আতিকুল ইসলাম : জলাবদ্ধতা আর মশার উপদ্রব থেকে আগের তুলনায় উত্তর সিটির মানুষের ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স চালু, রিকশার কিউআর কোড, কল্যাণপুরে রিটেনশন পন্ডকে অত্যাধুনিক হাইড্রো ইকো পার্ক নির্মাণ শুরু করতে পারা কিছুটা তৃপ্তির। এ ছাড়া জনগণের জন্য জনপরিসর তৈরি করতে পেরেছি। দখল করা খেলার মাঠ উদ্ধার করে জনগণকে দিতে পেরেছি।
ওয়াশিংটননিউজ টিভি : কোন কাজগুলো করতে পারেননি? যা নিয়ে আপনার অসন্তুষ্টি রয়েছে?
আতিকুল ইসলাম : আমি ঢাকাকে সবুজ করতে পারিনি। এটা অনেক কষ্টের। এবার দুই লাখ গাছ লাগাব। শুধু গাছ লাগানো না, কোন স্থানে কী গাছ লাগানো হবে, কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে- এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে নীতিমালা করেছি।